বিজ্ঞপ্তি:
দৈনিক শাহনামার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। জাতীয়, রাজনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন সহ সকল সংবাদের সর্বশেষ আপডেট জানতে ভিজিট করুন www.shahnamabd.com

রাজাপুরে ভিক্ষুক অন্ধ মা ও পঙ্গু বাবার সংসারে ৪ সন্তারের অনাহারি জীবন!

রাজাপুরে ভিক্ষুক অন্ধ মা ও পঙ্গু বাবার সংসারে ৪ সন্তারের অনাহারি জীবন!

ঝালকাঠি:
পঙ্গু স্বামী মোঃ রুস্তুম আলী খানকে ঘরে রেখে জন্মান্ধ স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তির আয় দিয়ে বেশ ভালই চলছিলো ৪ শিশু সন্তানসহ মোট ৬ সদস্যের পরিবারটি। কিন্তু করোনা ভাইরাসে বাহিরে বের হতে না পেরে গৃহবন্ধী হয়ে পড়েন একমাত্র আয়ের উৎস ভিক্ষাবৃত্তি করা অন্ধ মা হোসনেয়ারা বেগম।

ফলে বেশকিছু দিন ধরে ঘরে খাবার না থাকায় চরম সংকটে পড়ে না খেয়েই দিনাতিপাত করছেলন ঝালকাঠির রাজাপুরের গালুয়া বাজারের ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকার এই নিত্যন্ত অসহায় পরিবারটি। ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে পঙ্গু স্বামী ও ৪ শিশু সন্তান অন্ধ হোসনেয়ারাকে ভিক্ষার জন্য বাহিরে বের হতে কাকুতি মিনতি শুরু করেন কিন্তু বাহিরে তেমন লোকজন নেই এবং আইনশৃঙ্খলার ভয়ে বাহিরে বের হতে যাচ্ছেন না তিনি।

এছাড়া তার কোলের শিশুটিকে নিয়ে ক্ষুদার্ত পেটে বেশি সময় হাটতেও পারেন না তিনি। রাজাপুর সাংবাদিক ক্লাবের সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই অসহ্য যন্ত্রনাময় জীবনযাপনের বর্ণণা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জন্মান্ধ ভিক্ষক মা হোসনেয়ারা বেগম। শিশু সন্তান ফয়সাল ও ফাহিম বলছে, মা; বাবাতো হাটতে পারে না। তুমি ভিক্ষা করতে যাবা না? আমরা কি খাবো? ঘরে তো কিছু নেই। পঙ্গু স্বামী মোঃ রুস্তুম আলী খান পঙ্গু অবস্থায়ই নৌকায় মাঝিগীরি করে যতদূর পারেন আয় করেন। কিন্তু বর্তমানে তাও বন্ধ। এজন্য তার অন্ধ স্ত্রী হোসনেয়ারাকে ভিক্ষা করার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন শিশুদের আর্তনাত সহ্য করতে না পেরে।

হোসনেয়ারা বেগম বলেন, আমি জন্ম থেকেই দুটি চোখে দেখতে পাই না। বিয়ের আগেই গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তার স্বামীর একটি পা ভেঙ্গে যায়। সেই থেকে সে ছোট একটি নৌকায় করে ভান্ডারিয়া থেকে গালুয়া বাজারের বিভিন্ন দোকানির মালামাল এনে দেয়ার কাজ করে আসছিলেন।

বিয়ের পরে সেই রোজকার দিয়ে সংসার চললেও সন্তান হওয়ার পরে সংসারে অভাব দেখা দেয়। স্বামীর ঘরের জমিটুকু ছাড়া অন্য কোন জমাজমি বা অন্য কোন আয়ের উৎস নাই। তাই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে হোসনেয়ারা ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিলেন। এক এক করে পাঁচটি ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও কয়েকমাস আগে নিজ ঘরের পাশের পুকুরে পড়ে একটি সন্তান মারা যায়। বর্তমানে তাদের ফয়সাল (৯), ফাহিম (৬), ফাইজুল (৫) ও পাঁচ মাস বয়সের রোহানসহ মোট চার ছেলে রয়েছে।

করোনা সমস্যার কারনে স্বামীর রোজগার বন্ধ এবং অপরদিকে কোলের শিশু সন্তান ও করোনা সমস্যার কারনে হোসনেয়ারাও ভিক্ষা করতে যেতে পারছে না। আশপাশের মানুষের কিছু সাহায্য দিয়ে বিগত দিন সংসার চলছিলো। বর্তমানে ঘরের খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন স্বামী রুস্তুম তাকে ভিক্ষা করতে যেতে বলে। নানা সংকট ও ভয়ে সে যেতে না চাইলে রুস্তুম নিজের পেটের ক্ষুধা ও সন্তানের খাবারের জন্য এক পর্যায় তাকে গাল মন্দ করতে বাধ্য হন।

হত দরিদ্রের সংসার হলেও বিগত দিনে তাদের মধ্যে ভালোবাসার কোন কমতি ছিলো না। কেঁদে কেঁদে হোসনেয়ার আরো বলেন, স্বামীর জালায় রাগ করে বাবার বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু মায়ের সংসারও চলছে ভিক্ষা করে অপরদিকে কোলের পাঁচ মাস বয়সের ছোট ছেলে রোহান আমার জন্য কাঁদবে।

তাই যেতে পারিনি। শনিবার বিকালে খবর পেয়ে মাইটিভির ঝালকাঠি প্রতিনিধি বরকত হোসেন মৃধাসহ রাজাপুর সাংবাদিক ক্লাবের সাংবাদিকরা কিছু চাল-ডালসহ খাদ্য সামগ্রী দেন এবং রোববার সকালে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু সহয়োগীতা করেছে।

এ বিষয়ে গালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর মতিউর রহমান জানান, করেনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ বা সরকারি কোন সহায়তা পায়নি ওই পরিবারটি। আর যে অল্প বরাদ্দ দেয়া হয় তা কাদের দেয়া হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়, সে তালিকায় তার নাম পড়ে না। তিনিও সহলকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানান। এ অসহায় পরিবারটিকে সহযোগীতা করতে কল করুন ০১৭৩৫২৩০৫১৯ (হোসনেয়ারা), ০১৭১৮৫৫১৬৮১ (বিকাশ/পার্সোনাল)।

Please Share This Post in Your Social Media




All rights reserved by Daily Shahnama
কারিগরি সহায়তা: Next Tech